অস্থানিক মূল বিশেষ বিশেষ কার্য সাধনের জন্য পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে থাকে। অস্থানিক মূল সাধারণত তিন ধরনের কাজ করার জন্য রূপান্তরিত হয়ে থাকে, যথা- খাদ্য সঞ্চয়, যান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা ও শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পাদন।
খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য রূপান্তর: বিভিন্ন ধরনের অস্থানিক মূল ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে স্ফীত হয় এবং বিভিন্ন আকার ধারণ করে, যেমন মিষ্টি আলুর কন্দাল মূল, শতমূলী ও ডালিয়ার গুচ্ছিত কন্দ মূল ও করলার মালাকৃতির মূল ইত্যাদি। মিষ্টি আলুর কন্দাল অস্থানিক মূল মাটির কাছাকাছি কান্ডের পর্ব হতে বের হয় এবং খাদ্য সঞ্চয় করার ফলে অনিয়মিত ভাবে স্ফীত হয়ে অনির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। খাদ্য সঞ্চয় করা এই মূলের পরিবর্তিত কাজ।
কন্দাল মূল (চিত্র-৩.২): অস্থানিক মূল কখনো অনিয়মিতভাবে স্ফীত হয়, যথা- মিষ্টি আলু।
গুচ্ছিত কন্দমূল (চিত্র-৩.৩): ইহা কন্দাল মূলের মতো খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য অনিয়মিতভাবে স্ফীত হয়। তবে স্ফীত মূলগুলো একটি গুচ্ছে অবস্থান করে কারণ, এক গুচ্ছ অস্থানিক মূলের সবগুলোই খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য কন্দের মতো স্ফীত হয়ে থাকে এই জন্য এই মূলকে গুচ্ছিত কন্দমূল বলা হয়। খাদ্য সঞ্চয়ই এর প্রধান কাজ। উদাহরণ- শতমূলী ও ডালিয়া।
নডুলুজ মূল (চিত্র-৩.৪): যখন মূলের অগ্রভাগ খাদ্য সঞ্চয় করে স্ফীত হয়, যেমন- আমআদা।
মালাকৃতির মূল (চিত্র-৩.৫): যখন কোনো অস্থানিক মূল পর্যায়ক্রমে স্ফীত ও সংকুচিত হয়, যথা- করলার মূল।
যান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার্থে রূপান্তর
এ মূল উদ্ভিদকে মাটির উপর খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে, আরোহণ করতে বা পানিতে ভাসতে সাহায্য করে। এ জন্য অস্থানিক মূলের বিভিন্ন রকম রূপান্তর ঘটে থাকে, যেমন- স্তম্ভমূল, ঠেসমূল, আরোহী মূল, ভাসমান মূল ইত্যাদি।
স্তম্ভমূল: এই ধরনের অস্থানিক মূল কাণ্ড বা শাখা হতে উৎপন্ন হয়। এরা খাড়াভাবে নিচের দিকে নামতে নামতে মাটির মধ্যে প্রবেশ করে এবং মোটা হয়ে স্তম্ভের আকার ধারণ করে, যেমন- বট।
ঠেস মূল: কোনো কোনো উদ্ভিদের প্রধান কান্ড দুর্বল হওয়ার কারণে সোজাভাবে দাঁড়াতে পারে না। তাই কান্ডের গোড়ার দিক থেকে কতগুলো অস্থানিক মূল বের হয়ে তীর্যকভাবে মাটিতে প্রবেশ করে, যেমন কেয়ার ঠেস মূল।
আরোহী মূল: এই মূল দুর্বল কাণ্ডযুক্ত উদ্ভিদের পর্ব হতে উৎপন্ন হয়ে অন্য কোনো উদ্ভিদ বা অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে এবং উদ্ভিদটিকে উপরে উঠতে সাহায্য করে, যেমন- পান।
শারীরবৃত্তিয় কার্য সাধনের জন্য রূপান্তর
মূলের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় কাজ সমাধা করার জন্য অস্থানিক মূলের রূপান্তর ঘটে থাকে।
পরাশ্রয়ী বায়বীয় মূল: এই প্রকার মূল বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে। এদের বায়বীয় মূল বলে। যথা- রাস্না।
পরজীবী বা চোষক মূল পরজীবী উদ্ভিদে ক্লোরোফিল থাকে না তাই খাদ্যের জন্য আশ্রয়দাতা উদ্ভিদের দেহে বিশেষ ধরনের মূল প্রবেশ করিয়ে খাদ্যরস শোষণ করে থাকে। এ মূলগুলোকে চোষক মূল বলে, যেমন- স্বর্ণলতা।
শ্বাসমূল: সমুদ্র উপকূলে লবণাক্ত ও কর্দমাক্ত মাটিতে উদ্ভিদের প্রধান মূল হতে শাখা মূল মাটির উপরে খাড়াভাবে উঠে আসে। এই সকল মূলে ছোটো ছোটো ছিদ্র থাকে। এই ধরনের রূপান্তরিত মূলকে শ্বাসমূল বা নিউমাটোফোর বলে। যেমন- সুন্দরী, গরান ইত্যাদি।
জনন মূল: কোনো কোনো উদ্ভিদের মূল প্রজননে অংশগ্রহণ
করে থাকে। যেমন- মিষ্টি আলু, পটল, কাকরোল ইত্যাদি।
common.read_more